বিসমিল্লাহ। আল-হামদুলিল্লাহ!
পরীক্ষায় ১০০ নম্বর থাকে, পাস মার্ক কতো? ৩৩। মানে হচ্ছে, তিন ভাগের এক ভাগ প্রশ্নের উত্তর দিতে পারলেই হবে। তুমি পাশ। যদি তিনটা প্রশ্নতে ১০০ নম্বর হয়, তাহলে একটা নম্বরের উত্তর দিলেই পাস। আহা কতো সহজ কুফফারের স্কুল সিস্টেম এর পরীক্ষা ব্যবস্থা।
কিন্তু আল্লাহর পরীক্ষা? প্রথম ষ্টেজের (কবরের) প্রশ্ন হচ্ছে তিনটা। সঠিক উত্তর দিতে হবে কয়টা জানো?
আচ্ছা কি কি যেন প্রশ্নগুলি?
১ঃঃ তোমার রব কে?
২ঃঃ একে চেনো? এই মানুষটাকে চেনো?
৩ঃঃ তোমার দ্বীন কি?
(সুনান আবু দাউদ। ভলিউম ৫, অধ্যায় ৩৯, হাদিস ৪৭৫৩ (সহীহ), মুসনাদ আহমাদ ১৮০৬৩, সহীহ আল-জামি ১৬৭৬)
আচ্ছা, একটা সাধারন প্রশ্ন করি।
আজকে কেউ যখন ইসলাম গ্রহন করে, ধরো একটা নাস্তিক ছিলো এতোদিন, সে বলবে, ১। হ্যাঁ, আমি একজন স্রষ্টাকে, আল্লাহকে বিশ্বাস করলাম ২। আমি মোহাম্মদকে (সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়া সাল্লাম) আল্লাহর রসুল হিসেবে মানলাম।
বলোতো, তুমি তাকে কি বলবা? সে মুসলিম হয়ে গেছে, তাই না? এখন তুমি তাকে কালিমা পড়তে বলবা।
আশহাদু আন লা ইলাহা ইল্লা আল্লাহ, ওয়া আশহাদু আন্না মুহাম্মাদুর রসুলল্লাহ। কাহিনী শেষ। ইসলামের পাঁচ পিলারের এক পিলার (স্তম্ভ) ‘ঈমান’ হয়ে গেছে।
এরপর তুমি তাকে বাকি চারটা পিলার ধরাইয়া দিবা। (সলাত, সিয়াম, যাকাত, হাজ্জ) ব্যাস সে বলবে, আমি মুসলিম, আমার ধর্ম ইসলাম।
এখন যদি তাকে কেউ জিজ্ঞেস করে, “ও বাছা, তোমার ধর্ম কি? সে বলবে, “ইসলাম” আর সে যদি তা বলে তাহলে কি সে ভুল বলবে?
তাহলে ব্যাপারটা কি দাঁড়াইলো? একজন মানুষ আল্লাহকে আর রসুলুল্লাহকে স্বীকার করলেই সে নির্দ্বিধায় বলতে পারছে তার ধর্ম ইসলাম। তার দ্বীন ইসলাম।
দুইটা বিষয় মানলেই তো তুমি বলছো তার দ্বীন হলো ইসলাম।
তাহলে কবরে ওই তৃতীয় প্রশ্নের মানে কি? খেলাধুলা? “খেলিছো এই বিশ্ব লয়ে?”
একজনের দ্বীন ‘ইসলাম’ হওয়ার জন্য কি এক এবং দুই নম্বর প্রশ্নই যথেষ্ট না? তাই তো তুমি জানো, তাই না?
সে আল্লাহতে বিশ্বাস করে, সে রাসুলে বিশ্বাস করে, তার দ্বীন ইসলাম।
কিন্তু কথা হইলো কবরে তাহলে ও-ই তিন নম্বর প্রশ্নটা কোত্থেকে আসলো? ওই প্রশ্ন সে কেন করবে? ওই প্রশ্নের কথা তো আমাকে শেখানো হয় নাই!
আচ্ছা, একটা মুসলিম যখন ১ আর ২ সাক্ষ্য দেবে, তোমার বুকের পাটা আছে যে তুমি তাকে কাফির বলবা?
তাহলে? কবরে ও-ই তিন নম্বর প্রশ্নটার মানে কি? ওইটার উত্তর না দিতে পারলে তার পরিনতি কি? তার স্ট্যাটাস কি?
তুমি কি জানো?
তুমি কি জানো, ওই তৃতীয় প্রশ্নের মানে কি?
মানে হচ্ছে, তুমি ফেল।
মানে হচ্ছে, কঠিন মাইর।
মানে হচ্ছে, একটা নাস্তিক তিনটা প্রশ্নের উত্তর দিতে পারলো না, সে পাইলো জিরো। তুমি দুইটার উত্তর দিতে পারলা, তুমি পাইলা ৬৬। জিরো পাইয়া একটা নাস্তিক যে মাইর খাইলো তোমার ও একই মাইর। বলো তো, কি লাভ হইলো তোমার ৬৬ নম্বর পাইয়া?
মানে হচ্ছে, প্রথম প্রশ্ন। একটা কাফির, (একটা হিন্দু, খৃস্টান, বৌদ্ধ) জবাব দেবে, “আমার রব হইতেছে ‘কৃষ্ণ/যীশু/বুদ্ধা/প্রকৃতি ‘, সে ফেল করলো প্রথম প্রশ্নেই। সে খাবে মাইর, তুমি বলবা, “আমার রব হইতেছে আল্লাহ্”, তুমি পাশ করলা। আল হামদুলিল্লাহ।
মানে হচ্ছে, দ্বিতীয় প্রশ্ন। একটা কাফির বলবে, “মম, উম, শুনছিলাম”, সে করলো ফেল, নেমে আসবে মুঘুর আবারো। সেই মুঘুর তাকে চ্যাপ্টা করে ফেলবে, তুমি বলবা, “সে আমার রসুল, মোহাম্মদ, সাল্লা আল্লাহু আলাইহি ওয়া সাল্লাম।” তুমি পাশ করলা দ্বিতীয় প্রশ্নে ও। আল হামদুলিল্লাহ।
মানে হচ্ছে, তৃতীয় প্রশ্ন। তোমার তো এইবার মাথা খারাপ। এইটা কি হইলো। আমি কি করলাম। কি দ্বীন আমি করলাম। আমি তো মুসলিমই ছিলাম। আমি তো ভাবতাম আমি ইসলামই করতেছি। আমি তো খুব শক্ত করে পাঁচটা পিলার ধইরা ইসলাম করতে ছিলাম। ওই পাঁচটা পিলারই কি আমার দ্বীন না?
সুবহানাল্লাহ, কি ইসলাম তুমি করলা জীবন ভর, এই তৃতীয় প্রশ্ন সম্পর্কে তোমার কোন ধারনাই নাই।
আহা আফসোস তোমার জন্য। একটা নাস্তিক যে মাইর খাবে, তুমি দুইটা প্রশ্নের উত্তর দেয়ার পরও সেই একই মাইর। ইন্না লিল্লাহি ওয়া ইন্না ইলাইহি রাজিউন।
আহা আফসোস তোমার জন্য। একটা কাফির যে মাইর খাবে, তুমি দুইটা প্রশ্নের উত্তর দেয়ার পরও সেই একই মাইর। আউজুবিল্লাহ।
মানে হচ্ছে,
তুমি পাঁচটা পিলার নিয়া আছো ভালোই।
কিন্তু এরপর ছাদ, বেড়া, দরজা জানালার কোন কোন খবর রাখো নাই। ওয়াল দেয়ার কথা চিন্তা করো নাই।
সেই খোলা ছাদ দিয়া, খোলা দেয়াল দিয়া কুফফার এর দর্শন (Kuffar’s PHILOSOPHY), কুফফার এর কথা বার্তা (Word of Mouth of Kufr), কুফফার এর কর্ম (Kufr acts) বন্যার পানির মতো অবাধ যাতায়ত।
তুমি মুসলিম, পাঁচ পিলার নিয়া ভালোই দাড়াইয়া আছো,
কিন্তু, তোমার খোলা দেয়াল, খোলা দরজা দিয়া কুফফার তোমার বেড্রুমে ঢুকে তোমার সন্তানকে লালন পালন করতেছে, কোন ফাঁকে তোমার স্ত্রী-কন্যাদের কবেই ইসলাম থেকে বের করে নিয়ে গেছে, তোমার কোন খবর নাই। কুফফার তার দ্বীন তোমাকে ভালোই শিখাইয়া দিলো।
তুমি মুসলিম, তুমি, তোমার বাবারা, তোমার দাদারা ইসলাম করলো পাঁচ পিলার নিয়ে খুব শক্ত ভাবেই।
কিন্তু ফাঁকা বেড়া দিয়া কুফফার তার কারখানা নিয়া তোমার ঘরে ঢুইকা পড়লো।
আর তোমার বাবা মাকেই তার বাবা মা কবেই কাফিরের হাতে (কাফিরের কারখানাতে) তুলে দিছে তাকে ‘মানুষ’ বানানোর জন্য। মনে পড়ে, কুমীর যখন তার দশটা বাচ্চাকাচ্চাদের শিয়ালের কাছে শিখতে দিল, শিয়াল কি করলো? কিন্তু কুফফার তোমাকে শারীরিক ভাবে খায় নাই। খাইয়া ফেলছে তোমার দাদাদের মাথা, তোমার বাবাদের মাথা, তোমার মাথা। কয়েক প্রজন্ম ধরে।
তুমি মুসলিম। খুব পোক্তভাবে পাঁচ পিলার নিয়া আজো ভালোই দাড়াইয়া আছো,
অথচ যে রব তোমাকে মাথাটা দিয়া শ্রেষ্ঠ জীব বানাইছে, সেই মাথাটা সেই রবের জন্য ব্যবহার করলা না।
ভাবলা না, ওই পাঁচ পিলার তোমাকে ধরাইয়া দিছিলো যখন তোমার মাথা উপর ছাদ ছিলো।
কুফফার একশো বছর আগে (তোমার বাপ /দাদার সময় থেকেই) তোমার মাথার সেই ছাদকে গুড়াইয়া দিলো অথচ আজো তুমি পাঁচ পিলার নিয়া ইসলাম করতেছো। অবয়ব নিয়া তুমি মানুষ কিন্তু তোমার রবের কাছে তোমার মর্যাদা একটা কীটের চাইতে ও নীচে। সেই খবর তুমি পাবা ওই তৃতীয় প্রশ্নের উত্তর দেবার সময় (আল্লাহ তার আগেই তোমাকে গাইড করুক।)
তুমি মুসলিম। খুব পোক্তভাবে পাঁচ পিলার নিয়া ভালোই দাড়াইয়া আছো,
তোমার কি মনে পড়ে কাফির সেই কবেই তোমার বাবা মায়ের মাথায় কাফিরের জীবন ব্যবস্থা (The SEED of MATERIALISM, ভোগ বিলাশের জীবন ব্যাবস্থার বীজ) ‘পড়ালেখা করে যে, গাড়ী ঘোড়া চড়ে সে’ ঢুকিয়ে দিয়েছে? তোমার জাহান্নামের পথে হাঁটার সেই হাতে খড়ির কথা মনে পড়ে? (আল্লাহ্ তোমাকে এবং আমাকে জাহান্নাম থেকে রক্ষা করুক)।
অথচ তোমার রব তোমাকে নিষেধ করছে, বলছে, “আমি কিছুসংখ্যক কুফফারদের যে ঐশ্বর্য , ভোগ বিলাশের সামগ্রী দিয়েছি, তার দিকে চোখ তুলে ও তাকাই ও না” (২০ঃ১৩১) আর কুফফার তোমাকে শিখাইছে ওই ঐশ্বর্যের মধ্যেই সম্মান, ওই ভোগ বিলাশের মধ্যেই জীবন।
তো তুমি কাকে রব হিসেবে নিছো? তোমার আল্লাহকে না কুফফারকে? কার দ্বীন তুমি ফলো করছো, তোমার রবের দ্বীন, নাকি কুফফারের দ্বীন?
তুমি ইসলাম করতেছো, পাঁচ পিলার নিয়া ভালোই দাড়াইয়া আছো।
তোমার রব বলছে সম্মানিত সে যার যতো আল্লাহ-ভীতি বেশী। কুফফার তোমাকে শিখাইছে, সম্মানিত সে যার যতো সম্পদ আছে, ডিগ্রী আছে, বড়ো চাকরী আছে।
কুফফার এর সেই শিক্ষা, সেই সম্মান তুমি এমন ভাবে আকড়াইয়া ধরছো যে, এমন কি বাবা মা প্রদত্ত নামের আগে তুমি সেই সম্মানীয় ডিগ্রী বসাও। আহা!
নিজেকে জিজ্ঞেস করো, তুমি কার দ্বীন পালন করতেছো? কাকে তুমি তোমার অথরিটি হিসেবে নিছো। তোমার রব, আল্লাহকে না কুফফার কে?
তুমি ইসলাম করতেছ, তুমি পাঁচ পিলার নিয়া ভালোই দাড়াইয়া আছো।
কিন্তু এখন তোমার মাথা আর কাফিরের মাথার সঙ্গে কোন পার্থক্য নাই। এখন তোমার কথার সঙ্গে কাফিরের কথার কোন পার্থক্য নাই। তোমার জীবন দর্শনের সঙ্গে কুফফারদের জীবন দর্শনের কোন পার্থক্য নাই। তোমার জীবনে ব্যবস্থার সঙ্গে কুফফার এর জীবন ব্যাবস্থার কোনই পার্থক্য নাই।
এখনো কি বুঝতে পারছো না সেই তৃতীয় প্রশ্নের মানে কি?
মানে হচ্ছে,
কোরআনের সে আয়াত, “ও কুফফার, আমি সেসবের এবাদত করি না, তোমরা যেসবের এবাদত কর” (109:1-2)
তুমিতো মাথাটা দিয়া চিন্তা করলা না, কেন তোমার রাসুল এই সুরা তোমাকে প্রতি ফাজর আর মাগরিব সলাতে (সুন্নাত ২ রাকাআতে) তোমার জন্য ‘সুন্নাহ’ ঠিক করে গেছে। কিন্তু তো তাফসির পইড়াই বা শুইনাই এটা নাযিলের কারন যখন একবার জাইনা ফালাইছ তখন কি আর এটার সঙ্গে তোমার সম্পর্কের কথা ভাবছো? আর তোমার হুজুর তো এই সুরা শুধু ওই “লাকুম দিনুকুম ওয়া লিয়া দিন” ব্যাখ্যা করতেই টেনে আনে। এটাই তার কাছে সুরা কাফিরুন এর একমাত্র অর্থ।
অথচ তুমি দিন রাত কাফির যেসবের এবাদত করে ঠিক ঠিক সেসবের এবাদত তুমি ও কর। আহা কি নিপুন হাতে কাফির তোমাকে সেসবের এবাদত করা শিখাইছে।
আহা! আফসোস তোমার জন্য। তোমার রব তোমারে একটা মাথা দিয়াই শ্রেষ্ঠ জীব বানাইছে।
মানে হচ্ছে,
কোরআনের সেই আয়াত, “কুফফারদের অনুসরন করো না, করলে তুমি ধ্বংস হয়ে যাবে ” (২০ঃ১৬)
মানে হচ্ছে,
সেই হাদীস, “যে কেউ কুফফারের দ্বীন অনুসরণ করবে, সে কুফফারদের একজন।” (আবু দাউদ ৩৫১২, সহীহ)
মানে হচ্ছে,
কোরআনের সেই আয়াত, “তোমার কাছে পরিষ্কার দ্বীন (মিল্লাত) (জীবন ব্যবস্থা, তোমার প্রতিদিনের জীবন যাপন পদ্বতি) আসার পরে তুমি যদি কুফফারের দ্বীন (হাওয়া) (জীবন ব্যবস্থা যা তাদের আকাঙ্খা, Desire থেকে উদ্ভূত) অনুসরন করো, তাহলে আল্লাহর আযাব থেকে কেউ তোমাকে বাঁচাতে পারবে না।” (২ঃ১২০)
তোমাকে তো পাঁচ বছর ধরে কোরআন পড়াতেই পারলাম না। এরপর তুমি যদি কোরআন পড় তাহলে তোমার দৌড় তো ওই বাংলা অনুবাদ পর্যন্তই । আর সেটা পড়েই তো তুমি নিশ্চিত ভাবে জান্নাতের জন্য বসে থাকবা কারন তুমি তো সেটা পড়ে চিন্তা করবা না। আর আরবী জানা তো তোমার জন্য নিষিদ্ধই। আরবী জানলেই এবং চিন্তা করলেই তুমি বুঝতে পারতা যে একটা বাংলা অনুবাদ পড়ে ও তুমি হয়তো আল্লাহর আজাব থেকে বাঁচতে পারবা না। কারন তুমি তো পড়বা এই আয়াতের অনুবাদ ‘মিল্লাত’ মানে ধর্ম। আর তোমার ধর্ম তো হইলো ইসলামই। তুমিতো কুফফারের ধর্ম করতেছো না। তাহলে কি হইলো? বাংলা অনুবাদ পড়ে ও কোরআন তোমার কোন কাজে লাগলো না। আহা! কি পরিস্কার আল্লাহ সাবধানবানী তোমার জন্য, অথচ তুমি না জেনেই কবরে চেলে যাওয়ার জন্য তৈরী। আল্লাহ তোমাকে এবং আমাকে হিদায়া দান করুক। আল্লাহ তোমাকে এবং আমাকে মাপ করুক। কাফিরের জীবন ব্যবস্থা থেকে আমাদের আল্লাহ রক্ষা করুক।
“আল্লাহুম্মা নাজ্জিনা মিন আল-কোওমিল কাফিরুন”
মানে হচ্ছে,
সেই হাদীস “আমি জাহান্নামের জন্য বহু মানুষ এবং জিন সৃষ্টি করেছি” (আবু দাউদ ৪৭১৩। সহীহ)
মানে হচ্ছে,
সেই হাদিসে কুদসী, “ও আদম, এরা হচ্ছে তোমার সন্তান যাদের আমি জান্নাতের জন্য বানিয়েছি, আর এরা হচ্ছে তোমার সেই সন্তান যাদের আমি জাহান্নামের জন্য বানিয়েছি।” (মুয়াত্তা ইমাম মালিক অধ্যায় ৪৬, হাদিস ২)
মানে হচ্ছে,
কোরআনের সেই আয়াত, “তোমরা কি ভাবছো আমি “খেলেছি এই বিশ্ব লয়ে”? তোমারা কি ভাবছো আমি তোমাদেরকে খেলাধুলা করার জন্য, ‘বিশ্বকাপের জ্বরে’ ভোগার জন্য বানিয়েছি?” (২৩ঃ১১৫)
মানে হচ্ছে,
কোরআনের সেই আয়াত, “বাছা, যাই করো, যারা ঈমান আনছো, মুসলিম না হয়ে কিন্তু কবরে আইসো না, তুমি সহ্য করতে পারবা না।” (২ঃ১৩২)
একদিন তো চিন্তা করলা না, এই আয়াতটার মানে কি? যারা ঈমান আনছে, তারা তো মুসলিমই, তুমি কি তাদের অমুসলিম বলতে পারবা? তাহলে তাদেরকেই মুসলিম না হয়ে মরতে বলার মানে কি? খতিব তো প্রতি জুমাতেই রসুলুল্লাহ সল্লিল্লাহু আলাইহি ওয়া সাল্লামের এই সুন্নাহ অনুযায়ী এই আয়াত পড়ে। কেন পড়ে? কেন তোমার রসুল তার সাহাবীদের এই আয়াত প্রতি জুমাতেই স্মরণ করাতেন?
আহা! কতো প্রয়োজোন যে মাথাটার। তোমার রব তোমাকে সেই মাথাটা ঠিকই দিছে কিন্তু তুমি মাথাটাকে কীট পতঙ্গের অধিকারে দিয়া দিলা! আফসোস তোমার জন্য।
মানে হচ্ছে,
কোরআনের সেই আয়াত, “তোমরা কি কোরআনের কিছু বিশ্বাস করো আর কিছু অবিশ্বাস? তাহলে অপেক্ষা কর সেই দিনের জন্য, যেদিন তোমাদের ঘাড় ধরা হবে। আর ঘাড়টা ধরে জাহান্নামে নিক্ষেপ করা হবে” (২ঃ৮৫)
মানে হচ্ছে,
কোরআনের সেই আয়াত, “এই কোরআন যদি আমি পাহাড়ের উপর নাযিল করতাম তাহলে পাহাড় আল্লাহর ভয়ে চুরমার হয়ে যেত।” (৫৯ঃ২১)
মানে হচ্ছে,
কোরআনের সেই আয়াত, “তোমার রাসুল তোমার নামে অভিযোগ করবে আল্লাহ্ কাছে, ও আমার রব, আমার এই উম্মাহ কোরআনকে একটা পরিত্যক্ত সামগ্রী বানিয়ে ফেলছে” (২৫ঃ৩০)
মানে হচ্ছে,
সেই হাদীস, “আল্লাহ্ সেই মুসলিমকে ঘৃণা করে যে দুনিয়ার তাবৎ জ্ঞ্যান রাখে কিন্তু আল্লাহর দ্বীন এর ব্যাপারে মূর্খ থাকে”
মানে হচ্ছে,
কোরআনের সেই আয়াত, “যখন একজন মুসলিম তোমাকে সালাম দেবে, তুমি তাকে তার চাইতে উত্তম উপায়ে সালামের জবাব দিবা” (৪ঃ৮৬)
মানে হচ্ছে,
কোরআনের সেই আয়াত, “তুমি কি এই কোরআন নিয়ে চিন্তা কর না?”
মানে হচ্ছে,
কোরআনের সেই আয়াত, “যে কোরআন নিয়ে চিন্তা না করো সে একজন ভ্রস্ট, নষ্ট মানুষ।” (৫১ঃ৯)
মানে হচ্ছে,
তুমি যদি প্রতিদিন একটু ৫ মিনিট হইলেও তোমার রবকে নিয়া সেভাবে চিন্তা করতা, (যেভাবে তুমি হাঁটতে, খাইতে, শুইতে তোমার ব্যাবসা, কাজ, আর তোমার জিনার সঙ্গী (যার নাম তোমাকে সেখানো হইছে, ভালোবাসা, প্রেম) নিয়া চিন্তা কর,)
মানে হচ্ছে,
তুমি যদি, প্রতিদিন শুধুমাত্র একটা আয়াত পড়তা কোরআন খুলে, আর সেই আয়াত নিয়া চিন্তা করতা,
তাহলে তুমি ভাবতে পারতা, একি আশ্চর্য, এটা কেমন কোরআন, এট কেমন আল্লাহর বানী, মানুষের জন্য নাকি এটা সব বিষয়ের জন্য গাইডেন্স, কেয়ামত পর্যন্ত, তাহলে কেন এর মধ্যে মানুষের এতো রোগ শোকের চিকিৎসার কথা বলা নাই, কেন ক্যান্সারের চিকিৎসার কথা বলা নাই, কেন পদার্থ বিদ্যার সুত্র দেয়া নাই? কেন বিদ্যুৎ প্রবাহের কথা বলা নাই। কতো কষ্ট হইলো মানুষের এই বিদ্যুৎ আবিস্কার করতে, আহা বিদ্যুৎ কতো সহজ করে দিছে মানুষের জীবন, আহা কতো আরাম! সেই সব কিছু বলা নাই। অথচ একটা মামূলি বিষয়, কিভাবে সালাম দিতে হবে, সেটা বলা আছে, কিভাবে কারো বাড়িতে ঢুকতে হবে তা বলা আছে, মায়ের রুমে ঢুকতে গেলে কিভাবে ঢুকতে হবে, এসব সাধারান বিষয়, যেটা মানুষ সহজে করতে পারে, তা বলা আছে। আশ্চর্য। মাথায় ঢুকে না।
হ্যাঁ, এসব চিন্তায় যদি তুমি অস্থির হইতা তাহলে তোমার রব তোমাকে পরবর্তী ধাপের চিন্তায় নিয়া যাইতো। তুমি তো জানো, জ্ঞ্যান হচ্ছে নূর। জ্ঞ্যান আল্লাহর কাছ থেকে আসে। তুমি যদি কিন্টারগারটেন এর জ্ঞ্যান না অর্জন করো, একটা জ্ঞ্যানী শিক্ষক কি তোমাকে ক্লাস ফাইভের বিষয় বোঝাবে, বলো? আর তোমার রব, আল্লাহ্, তোমার মাষ্টার, তোমার শিক্ষক কি সর্বজ্ঞ্যানী না?
সে জানে, সে তোমাকে শ্রেষ্ঠ জীব বানাইছে ওই মাথাটা দিয়া, তোমাকে সে কোরআন বোঝার মাথাটা দিয়া পাঠাইছে, (যদি ও তোমার উলামা, যারা জাহান্নামের দরজা থেকে মানুষকে জাহান্নামের দিকে ডাকে, সে তোমার মাথায় আল্লাহর বিপরীত কথা এমন ভাবে ঢুকাইয়া দিছে যে, তোমার মুখ থেকে বের হয়, “আমরা তো কোরআন বুঝতে পারবো না”
সে জানে, সে তোমাকে শ্রেষ্ঠ জীব বানাইছে ওই মাথাটা দিয়া, তোমাকে সে কোরআন বোঝার মাথাটা দিয়া পাঠাইছে।
তুমি যদি সেই মাথাটাকে প্রতিদিন অন্তত ৫টা মিনিটের জন্য ব্যাবহার করতা তোমার রবের জন্য, আল্লাহর জন্য।
তুমি যদি মাত্র একটা আয়াত নিয়া একদিন চিন্তা করতা তাহলে তোমার মাথা খারাপ হইয়া যাইতো, তুমি পাহাড়ের মতো চুরমার হইয়া যাইতা।
তোমার খালি মনে হইতো কি করি আমি এখন, তুমি চাইতা যদি শরীরের সব রক্ত পানি কইরা বের করে দিতে পারতাম,
তুমি খালি আকাশের দিকে চাইতা আর বলতা, ইয়া রব, তুমি আমাকে গাইড করো, আমাকে তোমার আজাব থেকে বাচাও।
আমার এই শরীর তো কতো আরামে আমি রাখি, একটা ছোট ব্যাথা এই শরীর সহ্য করতে পারে না, আমাকে বলো, আমার রব, আমাকে কি করতে হবে তোমার আযাব থেকে বাঁচার জন্য?
তখন তুমি বুঝতা তোমার রবের গাইডেন্স কি জিনিস, কেন সে বলছে, “সে যাকে ইচ্ছা তাকে গাইড করে”, কেন সে বলছে, “ও আদম সন্তান তোমরা সব নষ্টদের দলে, শুধুমাত্র যাকে আমি গাইড করি, সুতরাং, আমার কাছে গাইডেন্স চাও” (সহীহ মুসলিম। ভলিউম ৬, হাদিস ৬৫৭২)
আর তুমি যদি তোমার রবের কাছে গাইডেন্স চাও, তোমার অন্তরে তাকে স্মরণ করো তখন ইন শা আল্লাহ্, সে তোমাকে গাইড করবে। আর একবার সে তোমাকে গাইড করলে তোমার মাথা খারাপ হয়ে যাবে,
ঠিক তখন তোমার রব তোমাকে আশ্রয় দিবে। আনন্দে তুমি আত্মহারা হয়ে যাবে, যখন তুমি জানবা, তুমি যখন তোমার রবকে অন্তরের মধ্যে স্মরণ করো সে ও, সুবহানাল্লাহ, সেও তোমাকে স্মরণ করে তার অন্তরে। আল্লাহু আকবর। সেই তোমার রব।
সেই রব তোমাকে বলবে, এতোদিন কোথায় ছিলা, ও আমার দাস (আব্দ), আমি ৪৩ বছর ধরে অপেক্ষা করতেছিলাম তোমার জন্য। তোমার রবের অসীম ধৈর্যের কথা তুমি যখন চিন্তা করবা, তুমি ছোট হয়ে যাইবা, নিজেকে তোমার তুচ্ছ মনে হবে।
তুমি মরে যাইবা লজ্জায়, আমি কি করলাম এতো দিন। কেন, কিভাবে, কি সেই কারনে আমি আমার মহা মহিমাময় রবের স্মরণ থেকে দূরে ছিলাম।
আর তখন তোমার রব তোমাকে আলো দেবে। সেই আলোতে তুমি দেখবা।
তুমি দেখবা তোমার চারপাশে শিরক আর কুফরের ঢেঊ। তুমি নিমজ্জিত। তুমি দেখবা, তোমার রক্তের ভিতরে নর্দমার পানি বইতেছে, তোমার নিঃশ্বাসের সঙ্গে বুড়ীগঙ্গার/হাজারীবাগের ট্যানারীর দুর্গন্ধযুক্ত বাতাস যাইতেছে। তুমি পাগল হয়ে যাইবা। এমন পরিবেশের মধ্যে তোমাকে কাফির ফেলে দিছে।
তখন সেই প্রশ্নের মানে তোমার কাছে পরিষ্কার হইতে থাকবে।
সেই প্রশ্নের মানে হচ্ছেঃ
তোমার রবের কাছে তার দ্বীন এতোটাই গুরুত্ব পূর্ণ যে সে কিভাবে এক মুসলিম অন্য মুসলিম কে সম্ভাষন করবে তা লিখে দ্যায়। তাহলে তার অন্য যে জীবন ব্যবস্থা, সেগুলি তার কাছে কতো গুরুত্বপূর্ণ হতে পারে?
তখন তুমি বুঝবা, সেই তৃতীয় প্রশ্নের মানে,
ওই পাঁচ পিলার হবে তোমার কারখানায় কাজ করার পোশাক মাত্র। আসল কাজ এখনো তুমি শুরুই কর নাই। আসল কাজ হচ্ছে আল্লাহর দ্বীন। আল্লাহ প্রদত্ত জীবন ব্যবস্থা। তার ম্যানুয়াল অনুযায়ী তোমার জীবন চালানো।
এবার তুমি চোখ বন্ধ কর। একাকী হও। চিন্তা কর। তুমি শ্রেষ্ঠ জীব। চিন্তা করার শক্তি দিয়াই তোমার রব তোমাকে শ্রেষ্ঠ বানাইছে। ভাবো।
আল্লাহু আলম।
আল্লাহ তোমাকে এবং আমাকে সেই দিনের আজাব থেকে রক্ষা করুক।
(আল্লাহুম্মা ইন্না আউজুবিকা মিন আল-আজাব আল-কবর)
আল্লাহ তোমাকে এবং আমাকে আল্লাহর দ্বীন সঠিক ভাবে বোঝার জ্ঞ্যান দান করুক।
আল্লাহ তোমাকে এবং আমাকে আল্লাহর দ্বীন কঠিন ভাবে মেনে চলার শক্তি দিক।
(ইয়া মুকাল্লিব আল-কুলুব সাব্বিত কলবিই আলা দিনিক)
আমিন।
Discover more from Basheera Wa Nazeera
Subscribe to get the latest posts sent to your email.